বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন
লালমনিরহাট প্রতিনিধি::
বয়স যখন ৫ বছর ঠিক সেই সময় বাবাকে হারিয়ে দুঃখের সাগরে ভেসে গিয়েছিলেন কলেজছাত্রী মরিয়ম। এ সময় মরিয়মকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে তার দুলাভাই। দুলাভাই লালন-পালনের পাশাপাশি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন তাকে। এরপর তাকে বিয়েও দেন দুলাভাই। ছোটবেলায় বাবাকে হারানো মরিয়ম ভেবেছিলেন বিয়ের পর স্বামীর সংসারেই সুখের মুখ দেখবেন। কিন্তু বিধিবাম তা আর হলো না। স্বামীর ছুরিকাঘাতে হাসপাতালে সাতদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বাবার বাড়ীতেই ফিরলেন লাশ হয়ে।
মঙ্গলবার (১১ আগষ্ট) বিকেলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কলেজছাত্রী মরিয়মের নিজ বাড়ী কালীগঞ্জের সেবক দাস গ্রামে মরদেহ আনা হলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
এর আগে (১০ আগষ্ট) সকালে দীর্ঘ সাত দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে মারা যায় মরিয়ম।
এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার সেবক দাস গ্রামের মৃতঃ মোস্তফা আলীর মেয়ে মরিয়ম আক্তারের (২৩) বয়স যখন পাঁচ বছর তখন বাবাকে হারিয়ে দুলাভাই রিয়াজুল ইসলামের নিকট বড় হন। দুলাভাই লালন-পালনের পাশাপাশি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। মরিয়ম বিয়ের উপযুক্ত হলে একবছর আগে পাশের ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে মোঃ সোহাগের সাথে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দেন। কথা থেকে যায় যৌতুক বাবদ আরও টাকা দিতে হবে। তবে নির্ধারণ ছিল না টাকার অংক। বিয়ের কিছুদিন পরেই মরিয়মকে তার দুলাভাইয়ের বাড়ীতে রেখে ঢাকায় চলে যায় স্বামী সোহাগ।
তারপর থেকে স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি। গত ঈদে ঢাকা থেকে বাড়ী ফিরে বাবা আব্দুস সামাদকে পাঠিয়ে দেন স্ত্রীকে বাড়ীতে আনার জন্য। ঈদের ছুটি কাটিয়ে ঢাকা চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে স্বামীর সাথে ঢাকা যাওয়ার বায়না ধরেন মরিয়ম। আর এই বায়নাই কাল হয়ে দাঁড়ায় মরিয়মের। গত ০৪ আগস্ট শ্বশুড় বাড়ীতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন মরিয়ম। প্রতিবেশী কেন্দু সহ অন্যান্যরা নির্যাতনে বাঁধা দিলে তাদের উপরই ক্ষিপ্ত সোহাগ ও তার বোন সাহেরা খাতুন (৩৫), ভাই আলম মিয়া (৩৭), সাইফুল ইসলাম (২৫), শ্বশুড় আব্দুস সামাদ (৬৫), ভাবি লাইজু (৩৮), আনিছা বেগম (৩২)।
কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঘর হতে ছুরি নিয়ে মরিয়মের কোমড়ে আঘাত করেন ঘাতক স্বামী সোহাগ। ছুরিকাঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রক্তাক্ত হন মরিয়ম। তাকে ফেলে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা ঘাতক সোহাগকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে আহত মরিয়মকে প্রথমে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে সাত দিন মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে গত ১০ আগস্ট (সোমবার) মারা যায় মরিয়ম। মরদেহ রংপুরে ময়না তদন্ত শেষে মরিয়মের নিজ বাড়ী কালীগঞ্জের সেবক দাস গ্রামে আনা হলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়রা ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে নির্যাতন ও হত্যার সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরজু মোঃ সাজ্জাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘাতক স্বামী সোহাগ গ্রেফতার রয়েছে এবং জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।